দুবাই ভিসা পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে দুবাইতে অনেকে কাজের উদ্দেশ্যে যেয়ে থাকেন। যেহেতু দুবাইতে প্রচুর বাংলাদেশী তাই সেখানে কাজের অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে অনেকেই রয়েছেন যারা দুবাই ভিসা করার সঠিক নিয়ম কানুন জানেন না বা কিভাবে দুবাই ভিসা করতে হয় এই সম্পর্কে ধারণা নেই। যার কারণে অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে থাকেন। আজকের পোস্টে দুবাই ভিসা পাওয়ার উপায় বা কিভাবে দুবাই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায় এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-
দুবাই ভিসা পাওয়ার উপায়
দুবাইতে এখন সব ধরনের কাজের ভিসা আবার চালু করা হয়েছে।কেননা দুবাই সরকার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ থেকে আবার কর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে লোক নেওয়ার জন্য তারা কিছু শর্ত চালু করে দিয়েছে যেগুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে নতুন কর্মীরা দুবাই যেতে পারবেন।দুবাই সরকার বর্তমানে অভিজ্ঞ কর্মীদের উপর বেশি নজর দিচ্ছে। যারা বিভিন্ন কাজের ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তারা চাইলে তাদের কাজের প্রমাণ দিয়ে খুব সহজেই দুবাই ভিসা নিতে পারবেন। দুবাইতে বর্তমানে ইলেকট্রিশিয়ান, লেবার, ক্লিনার, মিশন পেইন্টার এই ক্যাটাগরির ভিসা গুলোর জন্য খুব সহজেই আবেদন করতে পারবেন।তবে দুবাইতে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই মেডিকেল পরীক্ষা সঠিক ভাবে করাতে হবে এবং মেডিকেল রিপোর্ট ভালো হতে হবে। শুধু বাংলাদেশে মেডিকেল রিপোর্ট ভালো হলেও হবেনা দুবাইতে গিয়ে আবার রমেডিকেল করানো হবে সেখানেও মেডিকেল রিপোর্ট ভালো হতে হবে না হলে কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
দুবাই ভিসা কিভাবে হাতে পাবেন । বাংলাদেশে দুবাই এম্বাসি কোথায়
দুবাই ভিসা করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট লাগবে। এই ডকুমেন্টগুলো নিয়ে খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে অথবা দুবাই এম্বাসি থেকে কাজের ভিসা করা যাবে। তবে অনেকেই এই ক্ষেত্রে দালাল ধরে ভিসা করতে চান যার কারণে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে থাকে। সবথেকে ভালো হবে যদি ঢাকাতে অবস্থিত দুবাই এম্বাসির মাধ্যমে ভিসা আবেদন করেন ও কাগজপত্র জমা দেন। দুবাই এম্বাসির ঠিকানাটি হলো 191 Gulshan, north ave 1212.তাছাড়া কেউ চাইলে সরাসরি 02-8884523 এই নাম্বারের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন।
দুবাই কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগবে
দুবাই কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট আপনাদেরকে দুবাই অ্যাম্বাসিতে জমা দিতে হবে। ভিসা আবেদন করার সময় এই ডকুমেন্টগুলো সেখানে জমা দিতে হবে এবং তারা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সবকিছু ঠিকঠাক পেলে আপনাকে ভিসা প্রদান করবে।
➡️ আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি লাগবে।
➡️জাতীয় পরিচয় পত্র যদি না থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন সনদ হলেও হবে।
➡️আপনার কাছে অবশ্যই একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং সেই পাসপোর্টে অবশ্যই নূন্যতম ১ বছরের মেয়াদ থাকতে হবে।
➡️ ল্যাব থেকে প্রিন্ট করা সদ্য তোলা রঙ্গিন ছবি লাগবে।
তাছাড়া আরো কিছু ছোটখাটো ডকুমেন্ট যদি প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে সরাসরি এম্বাসি থেকে জেনে নিয়ে জমা দিতে পারেন।
দুবাই কোন কাজের চাহিদা বেশি
দুবাইয়ে বিভিন্ন রকম কাজ রয়েছে যেগুলোর চাহিদা বর্তমানে ব্যাপক।দুবাইয়ে চাহিদা সম্পন্ন কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ড্রাইভিং, কনস্ট্রাকশন, হোটেল বয়, ক্লিনার ও ইলেকট্রিশিয়ান। আপনি যদি ড্রাইভিং পারেন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে থাকে তাহলে দুবাইয়ে আপনার কাজের ব্যাপক চাহিদা থাকবে। তাছাড়া ওয়েল্ডিং, প্লাম্বিং ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক কাজের দুবাইতে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
দুবাই যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এই কাজগুলোতে দক্ষতা অর্জন করে যাওয়া উচিত তাহলে সেখানে অনেক চাহিদা থাকবে। ধরুন আপনি কনস্ট্রাকশনের কাজ শিখে একজন ভালো মিস্ত্রি হয়ে গিয়েছেন তাহলে দুবাইয়ে কিন্তু আপনার বেতন অন্যান্য কর্মীদের তুলনায় অনেক বেশি থাকবে। সকল স্থানেই দক্ষ জনশক্তির মূল্যায়ন রয়েছে তাই অবশ্যই উক্ত কাজগুলোর উপরে ভালো করে দক্ষতা অর্জন করে নিতে হবে।
দুবাই কোন কাজের বেতন কত
দুবাইতে বর্তমানে অনেক ধরনের কাজ পাওয়া যায় এবং কাজের ধরনভেদে বেতনের পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। দুবাইতে যদি ইলেকট্রিক কাজ করে থাকেন এবং হাতের কাজ ভালো হয় তাহলে বেতন হতে পারে ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকার মতো।দুবাই ড্রাইভিং কাজ করলে বেতন পাবেন ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো। দুবাইতে হোটেল সহকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকলে বেতন আসবে ৪০ থেকে ৬০ হাজারের মতো।দুবাইতে কনস্ট্রাকশনের কাজ করলে বেতন আসবে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।তাছাড়া দুবাইতে প্লাম্বিং এর কাজ করলে বেতন আসবে ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৯০ হাজার টাকার কাছাকাছি।
দুবাইতে কাজের সর্বনিম্ন বেতন কত
দুবাইতে কাজের সর্বনিম্ন বেতন কত এই নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন। দুবাইতে কাজের সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ আপনি দুবাইতে যেকোনো কাজ করুন না কেন আপনাকে অবশ্যই তারা ৩০ হাজার টাকার উপরে বেতন দিবে। যে যত বেশি দক্ষতা সম্পূর্ণ দুবাইতে তার বেতন তত বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই অবশ্যই দুবাই যাওয়ার আগে সঠিক কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর যেতে হবে তাহলে ভালো বেতন পাওয়া যেতে পারে।
দুবাই ভিসার দাম কত
দুবাই যেতে হলে চার লক্ষ টাকা থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে। তবে কোন ব্যক্তি যদি সরকারিভাবে ভিসা নিয়ে দুবাই যেতে পারেন তাহলে তার খরচের পরিমাণটা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে।ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে দুবাই যেতে হলে তার তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কাজের ধরন অনুযায়ী খরচ আসতে পারে। তাছাড়া অনেকেই দুবাই ফ্রি ভিসা নামে যে ভিসাটি পেয়ে থাকেন অর্থাৎ বন্ধ দোকান বা অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে যে ফ্রি ভিসা দেওয়া হয় ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ আসতে পারে।দুবাই অবস্থিত বিভিন্ন কোম্পানি ও মালিকরা এই ধরনের ফ্রি ভিসা তৈরি করে থাকেন।
বাংলাদেশ থেকে দুবাই বিমান ভাড়া কত
বাংলাদেশ থেকে দুবাই বিমান ভাড়া কত বা বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ে বিমানে করে যেতে কত টাকা লাগে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে।বাংলাদেশের ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাই এয়ারপোর্টের বিমানের সর্বনিম্ন ভাড়া হলো ৪৭,১৬৭ টাকা ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৯,১৮৫ টাকার মতো।
দুবাই যেতে কত বছর বয়স লাগে
দুবাইতে কাজের ভিসায় যেতে তার পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী অবশ্যই ২২ বছর পূর্ণ হতে হবে।তাছাড়া অনেক কোম্পানি রয়েছে যেসব কোম্পানিগুলোতে যেতে বয়সসীমা আরো কম হলেও সমস্যা নাই। দুবাইতে বেশিরভাগ ভিসায় যেতে হলে বয়স সীমা ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে হতে হয় এবং সর্বোচ্চ ৬৫ বছরের মধ্যে দুবাই যাওয়া যায়। অর্থাৎ ৬৫ বছরের বেশি হয়ে গেলে তখন কেউ দুবাইতে অবস্থান করতে পারবেন না।
শেষ কথা- আশা করি আজকের পোস্টটি যারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন দুবাই ভিসা পাওয়ার উপায় দুবাই ভিসা খরচ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাবেন আমরা উত্তর দিবো। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url