আমাশয় রোগের চিকিৎসা
আমাশয় বা পেট খারাপের সমস্যাটা সাধারণত বর্ষাকালে হয়ে থাকে। দূষিত জল ও খাবারের মাধ্যমে এই রোগটি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।আমাশয় রোগ হয়ে গেলে এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিত্রাণ করা দরকার।আজকের পোস্টে আমাশয় রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা,আমাশয় রোগ কেন হয়, আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও আমাশয় রোগের ঔষধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-
আমাশয় রোগ কেন হয়। আমাশয় রোগের কারণ
আমাশয় রোগটি সাধারণত ভাইরাল ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়া সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। তবে এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দূষিত জল ও দূষিত খাবার খেলেও হতে পারে। যখন একজন ব্যক্তি আমাশয় রোগের শিকার হয়ে থাকেন তখন সেই অনুজীবটি রোগীর অন্ত্রে বাস করে থাকে। তারপর এটি সংক্রমিত ব্যক্তির মলের সাহায্যে আবার বাইরে চলে যায়। এই অনুজীবটি কখনো জল ও খাবারের সংস্পর্শে আসলে সেটা আবার দূষিত করে ফেলে।
আমাশয় রোগের লক্ষণ
আমাশয় রোগ হওয়ার পর কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। আমাশয় রোগের উপসর্গ পাঁচ দিন বা তার বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো হালকা হতে পারে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো গুরুতর রূপ ধারণ করতে পারে।অনেক ক্ষেত্রে রোগী ডায়রিয়া বা বমিতে ভুগতে পারে। এই বমি বা ডায়রিয়ার কারণে শরীর জল শূন্যতা হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া আমাশয় রোগের আরো কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:-
➡️ পেট ফুলে যেতে পারে
➡️ পেটে ব্যথা হতে পারে
➡️ ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে
➡️ পেট ফাপার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে
➡️ বমি বমি ভাব হতে পারে
➡️ প্রস্রাব এর পরিমাণ কমে যেতে পারে
➡️ পেটে খিচুনি বা ব্যাথা হতে পারে
➡️ জ্বর বা সর্দি আসতে পারে
➡️ দৈহিক শক্তি হ্রাস পেতে পারে ও ওজন কমে যেতে পারে
সাধারণত কোন ব্যক্তির যদি আমাশয় রোগ হয়ে থাকে তাহলে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে।
আমাশয় রোগের চিকিৎসা
আমাশয় রোগের লক্ষণগুলোর তীব্রতার ওপর নির্ভর করে রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। যদি লক্ষণ গুলি খুবই গুরুতর না হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তার নির্ধারণ করেন যে এটি ব্যাসিলারি ডিসেনট্রি সেখানে সামান্য কিছু বা একদমই কোন ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। আর এই ধরনের অসুস্থতা সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই চলে যাই।তবে অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তার আমাশয় রোগীদের জন্য এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়ে থাকেন।
ডাক্তার যদি নির্ণয় করেন যে এটা অ্যামিবা ঘটিত আমাশয় সে ক্ষেত্রে আপনাকে সম্ভবত একটি অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ঔষধের ১০ দিনের কোর্স দিয়ে শুরু করতে হবে। তাছাড়া পর্যাপ্ত জল পান করার মাধ্যমে আপনার শরীর আর্দ্র রয়েছে কিনা সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া এই সময়টাতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
আমাশয় রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা । আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাশয় রোগের প্রাথমিক কারণ ধরা হয়ে থাকে দুর্বল স্বাস্থ্যবিধিকে। আমাশয় রোগে কেউ সংক্রমিত হলে তার দ্বারা আশপাশের মানুষজনও আক্রান্ত হতে পারে। নিচে আমাশয় রোগের ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা বা আমাশয় রোগ প্রতিরোধ করার জন্য প্রাকৃতিক চিকিৎসা তুলে ধরা হলো:-
১.আদা চা
আদা আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে দারুন একটি উপাদান।কেননা আদাতে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। আদার রস এই সময়টাতে পান করলে পেট ব্যথার মত সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। প্রথমে একটি পাত্রে এক টুকরো আদা নিতে হবে। তারপর আদা টুকরা টি সুন্দরভাবে বেটে বা পিষে নিতে হবে।তারপরে আস্তে আস্তে আদার রস ছেঁকে নিতে হবে। এবার আদা রসের সাথে এক চিমটি লবণ দিতে হবে।এটি এক থেকে দুইবার পান করার মাধ্যমে আপনার আমাশয় দূর হয়ে যাবে।
২.পুদিনা ও লেবু জল
পুদিনা ও লেবু পেট প্রশমিত করতে দারুন ভূমিকা পালন করে থাকে। পুদিনাতে এন্টিভাইরাল, এনটি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সাধারণত শরীরের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে থাকে। প্রথমে এক গ্লাস পানি ও একটি লেবুর রস নিতে হবে। তারপর ২০ টি পুদিনা পাতা নিতে হবে এবং পুদিনা পাতা পেস্ট করে রস বের করে নিতে হবে।তারপর লেবুর রস ও পুদিনা পাতার রস পানির সাথে মিশিয়ে এটি দিনে তিন থেকে চার বার পান করতে হবে। এটি পান করার মাধ্যমে আমাশয়ের সমস্যা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পেতে পারেন।
৩.লেবু ও লবণ
লেবুতে রয়েছে এক ধরনের আ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা আপনার পেটকে প্রশমিত করার পাশাপাশি শরীরের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে থাকে। প্রথমে এক গ্লাস পানি নিতে হবে ও তার সাথে একটি লেবুর রস মেশাতে হবে। তারপরে এর সাথে এক চিমটি লবণ যোগ করতে হবে। লবণ যোগ করা হয়ে গেলে মিশ্রণটি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। এই লেবু ও লবণ পানি আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে দারুণ কার্যকরী।
৪.ধনেপাতা ও লেবু জল
লেবুতে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য যা সাধারণত আমাশয় বন্ধ করার জন্য দারুণভাবে কাজ করে থাকে। আর বদ হজম জনিত সমস্যা দূর করার জন্য ধনেপাতা দারুন কাজ করে। ধনেপাতা ও লেবুর মিশ্রণ তৈরি করলে এটি পেটকে প্রশমিত করবে ও যকৃতের কার্যকারিতা সঠিকভাবে করতে সাহায্য করবে।প্রথমে চার থেকে পাঁচটি ধনেপাতা ভালোভাবে পিষে নিতে হবে। তারপর এক গ্লাস জলে এই ধনেপাতার পেস্ট যোগ করতে হবে। তার সাথে এক বা দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করে ফেলতে হবে।
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
আমাশায় আক্রান্ত রোগীকে কোন ধরনের খাবারগুলো খেতে দিতে হবে বা আমার আক্রান্ত রোগীর খাবার তালিকা কেমন হবে এই মেয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। নিচে আমাশয় রোগীর খাদ্য আইটেম তুলে ধরা হলো:-
১.কলা
২.সাদা রুটি
৩.সাদা ভাত
৪.আলু ভর্তা
৫.মুরগি বা চরবিহীন মাংস
৬.দই এবং ওটমিল
তাছাড়া ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করতে পারেন দ্রবণীয় কিছু ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এই খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে আপেল, গাজর, বিট, মাশরুম, ডালিম, লেবুর রস ইত্যাদি। তাছাড়া আমাশয় হলে এই সময়ে ঝাল ও মসলাদার খাবার খাওয়া যাবে না কেননা এগুলো পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ক্যাফেন যুক্ত পানি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার এই সময় খাওয়া যাবেনা।
আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম
অনেকেই আমাশয় রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম জানতে চাই। তবে আমার পরামর্শ হচ্ছে আমার সাথে রোগের এলোপ্যাথিক ঔষধ গুলো অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত খাবেন না। কেননা এই ধরনের ঔষধ গুলো খুবই মারাত্মক হতে পারে ভুল ব্যবহারের কারণে। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি আমাশয় দূর করা সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমার সাথে রোগের ঔষধ সেবন করা উচিত।
আমাশয় রোগের এন্টিবায়োটিক
আমাশয় রোগ হলে প্রধান করণীয় হচ্ছে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে এই সকল ঘরোয়া ঔষধ গুলো কাজ করে না। তখন অনেক ডাক্তার রোগীদেরকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে।
➡️Doxicap capsule
➡️Flagyl 400 mg Tablet
➡️ Zox 500 mg Tablet
শেষ কথাঃ- আশা করি আজকের পোস্টটি যারা বিস্তারিত ও মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা আমাশয় রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও আমাশয় রোগের ঔষধের নাম কি এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url